মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬

দূর পাহাড়ে | বান্দরবান ভ্রমণ

ফিরোজ শাহরিয়ার |

bandarban
সবুজ পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের মিতালি ‘সেদিন ছিল পাহাড়টার জন্মদিন। পাহাড় মেঘকে বলল, আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে। মেঘ পাহাড়কে বলল, আজ তোমাকে স্নান করিয়ে দেব চন্দনজলে।’ পাহাড় আর মেঘের মিতালি নিয়ে এসব কথার যথার্থতা টের পাওয়া যায় বর্ষায় পাহাড়ে বেড়াতে গেলে। সেটা যদি হয় এই ঈদে বান্দরবানের গহিন অরণ্য, তাহলে তো কথাই থাকে না।
বান্দরবান থেকে থানচি কিংবা রুমায় যেতে যেতে মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো কত দৃশ্য চোখে পড়বে! কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি, কখনো বা মেঘের মিছিল ঠেলে ছুটে চলা। হাত বাড়ালে মেঘের ছোঁয়া। আবার সবুজ বনাঞ্চলে ঘেরা উঁচু পাহাড়ি পথে চলতে চলতে নিচের দিকে তাকালে তখন নিজেকে মনে হবে মেঘের ভেলায় চড়ছেন।

দেখার আছে অনেক কিছু
পাহাড়ি সবুজ বন, মেঘমালা, পাহাড়ি ঝরনা আর সাংগু নদীর একমুখী ছুটে চলার দৃশ্য আপনাকে হাতছানি দেবে বান্দরবানের পথে পথে। বান্দরবান থেকে থানচির পথে যেতে প্রায় ১০ কিলোমিটার পর শৈলপ্রপাত। পাহাড়ি ঝরনা। যদিও এটি এখন শুকিয়ে গেছে। এর কিছুদূর যাওয়ার পর মিলবে চিমবুক পাহাড়। বান্দরবান থেকে চিমবুকের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। এই পাহাড়ের চূড়া থেকে আপনি বঙ্গোপসাগর, চট্টগ্রাম বন্দর দেখতে পাবেন। মেঘের আনাগোনার দিনে হাত বাড়ালেই শীতল ছোঁয়া পাবেন।
চিমবুকের পর চলতে চলতে একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়াতে হয়। একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা, ‘বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সড়ক’। সাইনবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে দু-একটা ছবি তুললে মন্দ হয় না।
ছবি তোলা শেষ। এবার সামান্য পথ যেতেই নীলগিরি। পর্যটন স্পট। বান্দরবান থেকে দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার ৬০০ ফুট উঁচু এই পাহাড়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সাতটি বিশ্রামাগার। মেঘদূত, আকাশনীলাসহ নানা বাহারি নামের এসব বিশ্রামাগারে রাত কাটানোর জন্য তিন থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে।
তবে এমনিতে ৫০/৬০ টাকার টিকিট কেটে নীলগিরির চূড়া থেকে পাহাড়ের চারদিকের সবুজ দৃশ্য অবলোকন করা যায়। নীলগিরিতে করা হয়েছে একটি হেলিপ্যাডও। এখানকার বিশ্রামাগার ভাড়া নিতে হলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আগে থেকে যোগাযোগ করতে হয়।
নীলগিরি থেকে যত দক্ষিণে যাবেন, ততই আস্তে আস্তে সর্বোচ্চ সড়ক থেকে নিচের দিকে নামতে থাকবেন। কখনো দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে, কখনো বা পাহাড়ের পাশের সরু সড়ক ধরে চলে যাবে চাঁদের গাড়ি কিংবা নিজস্ব জিপ। পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের ছোট ছোট ঘরবাড়ি থেকে মাঝেমধ্যে উঁকি দেবে কোনো নারীমুখ কিংবা ছোট্ট শিশু। জুম চাষও দেখতে পাবেন। বর্ষার এই সময়টাতে আদিবাসী নারী-পুরুষ ব্যস্ত থাকে জুমের মাঠে।
এ ছাড়া ঘুরে আসা যায় আদিবাসীদের বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের বাগানে। পাহাড়ি ঝরনা থেকে আদিবাসী নারীদের পানি সংগ্রহ করার দৃশ্য দেখতে ভুলবেন না যেন। তা ছাড়া দুই পাহাড়ের মাঝখানে উন্মত্ত বর্ষায় ছুটে চলা সাংগু নদীও টানবে আপনাকে। আদিবাসীপাড়ার কার্বারি কিংবা কারও সহযোগিতায় ডিঙি কিংবা নৌকায় চড়ে আপনিও চলে যেতে পারেন আশপাশের কোনো মারমা, মুরং বা ম্রোপাড়ায়। আদিবাসীদের জীবনযাত্রা আপনার প্রাণ ছুঁয়ে যাবে। ঈদের ছুটিটা উপভোগ্য না হয়ে পারেই না!
যেভাবে যাবেন
ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম থেকে বাসযোগে বান্দরবান। সেখানে রাত যাপনের জন্য বিভিন্ন হোটেল রয়েছে। এরপর কোনো এক সকালে বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়িযোগে আরও গহিন অরণ্যে যাত্রা করা যায়। এ জন্য ভাড়া পাওয়া যায় চাঁদের গাড়ি। বান্দরবান থেকে থানচি পর্যন্ত একটি গাড়ি আসা-যাওয়া ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়। নিজস্ব গাড়ি নিয়েও যাওয়া যায়। তবে পাহাড়ি পথ, বিশেষ করে বান্দরবানের আঁকাবাঁকা দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা সম্পর্কে চালক অভিজ্ঞ হলে ভালো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...