শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বিপরীতার্থক শব্দ | নির্মিতি | বাংলা ব্যাকরণ

প্রদত্ত শব্দ বা মূলশব্দের বিপরীত অর্থ প্রকাশক শব্দকে বিপরীত শব্দ বলে। অথবা একটি শব্দের অর্থ যদি তার বিপরীত বা উল্টো বা নাবোধক হয় তাহলে সেই শব্দকে বিপরীত শব্দ বলে। অন্যভাবে বলা  যায়, পরস্পর বিপরীত ভাবার্থক দুটো শব্দকেই বিপরীত শব্দ বলে।
ড. সুনীতিকুমারের মতে, দুটি শব্দের অর্থ পরস্পর বিপরীত হইলে, শব্দ দুটিকে বলা হয় বিপরীতার্থক শব্দ।
ড. সুকুমার সেনের মতে, কোন শব্দ অন্য একটি শব্দের বিপরীত অর্থ প্রকাশ করলে সে শব্দ দুটিকে পরস্পরের বিপরীতার্থক বা বিপরীত শব্দ বলে।


বিপরীত শব্দের প্রয়োজনীয়তা
বিপরীত শব্দ বিভিন্নভাবে সাহায্য করে থাকে। যেমন : বিপরীত শব্দ বাক্যকে সুন্দর, স্পষ্ট, শ্রুতিমধুর করে। বাক্যের গুণ বা যোগ্যতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এবং মনের ভাব যথাযথভাবে অল্প কথায় প্রকাশ করতে সহায়তা করে। যেমন: ‘লোকটির স্বভাব ভালো না’ বাক্যটি যেমন সৌন্দর্য বহন করে তারচে বেশি সৌন্দর্য বহন করে যদি বলি—লোকটি মন্দ স্বভাবের। তাই সরাসরি না শব্দটি ব্যবহার না করে বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে বাক্যের সৌন্দর্য বজায় রাখা যায়।

বিপরীত শব্দ গঠন করার নিয়ম
বিভিন্নভাবে একটি শব্দের বিপরীত শব্দ গঠিত হয়। যেমন :
১. একটি শব্দের হুবহু বিপরীত শব্দ গঠিত হয়। যেমন : ভালো-মন্দ।
২. বিপরীত শব্দ বিশেষভাবে নাবোধক অর্থ প্রকাশ করে। যেমন : ভালো—মন্দ, সবর—নীরব।
৩. শব্দের উৎপত্তি অনুসারে বিপরীত শব্দ হয়। যেমন:
ক) সংস্কৃত ও সংস্কৃত শব্দের বিপরীত শব্দ হয়। যেমন : স্বেত—কৃষ্ণ।
খ) তদ্ভব ও তদ্ভব শব্দের বিপরীত শব্দ হয়। যেমন : সাদা—কালা।
গ) বিদেশি ও বিদেশি শব্দের বিপরীত শব্দ হয়। যেমন : ইহকাল—পরকাল।
৪. শব্দশ্রেণি অনুসারে বিপরীত শব্দ হয়। যেমন:
ক) বিশেষ্য ও বিশেষ্য শব্দের বিপরীত শব্দ হয়। যেমন : দিন—রাত।
খ) বিশেষণ ও বিশেষণ শব্দের বিপরীত শব্দ হয়। যেমন : ভালো—মন্দ, সবর—নীরব।
গ) ক্রিয়া ও ক্রিয়া শব্দের বিপরীত শব্দ হয়। যেমন : হাসি—কান্না।
ঘ) ক্রিয়াবিশেষণ ও ক্রিয়াবিশেষণ শব্দের বিপরীত শব্দ হয়। যেমন : প্রকাশ্যে—গোপনে।
৫. শব্দের গঠন  অনুসারে বিপরীত শব্দ হয়। যেমন:
ক) একটি শব্দের পূর্বে উপসর্গযুক্ত হয়ে বিপরীত শব্দ গঠিত হয়। যেমন : সুঅভ্যাস—কুঅভ্যাস।
খ) নরচিহ্ন ও নারী চিহ্ন বা নারী চিহ্ন ও নরচিহ্ন অনুসারে বিপরীত শব্দ গঠিত হয়। যেমন : ছেলে—মেয়ে, স্ত্রী—পুরুষ।
গ) কারক অনুসারে বিপরীত শব্দ গঠিত হয়। দুটি শব্দের কারক অক্ষুণ্ন থাকবে। যেমন : প্রভাতে-সন্ধ্যায় (অধিকরণ), আসলকে-নকলকে (কর্ম) যত্নে-অবহেলায় (করণ), নিজের-পরের (সম্বন্ধপদ)
ঘ) শব্দের পরে বা আগে শূন্য, না, বি, বে, অ, ছাড়া, হারা, হীন, বিহীন যুক্ত হয়ে বিপরীত শব্দ হয়। যেমন : যুক্তিপূর্ণ—যুক্তিশূন্য, জানা—না জানা, খোঁজ—নিখোঁজ, বিপদ—বিপদহীন।

নিয়ম অনুসারে নমুনা
উপসর্গযোগে   হাঁবোধক—নাবোধক
১. অ        : কারণে—অকারণে, বাধ্য—অবাধ্য, ভদ্র—অভদ্র, ব্যয়—অব্যয়, পুষ্টি—অপুষ্টি
২. অন        : অভিজ্ঞ—অনভিজ্ঞ, আদর—অনাদর, অবসর—অনবসর, ন্যায়—অন্যায়
৩. অনু—বি     : অনুরাগ—বিরাগ, অনুরক্ত—বিরক্ত
৪. অনু—প্রতি    : অনুকূল—প্রতিকূল, অনুলভ—প্রতিলভ
৫. আ—প্র     : আদান—প্রদান
৬. আ—নির    : আনন্দ—নিরানন্দ/বেদনা, আশা—নিরাশা, আগমন—নির্গমন
৭. আ—ব      : আকর্ষণ—বিকর্ষণ
৮. অতি—অনা   : অতিবৃষ্টি—অনাবৃষ্টি
৯. অভি—নির   : অভিমান—নিরভিমান
১০. উৎ—অপ   : উৎকর্ষ—অপকর্ষ, সংস্কৃতি—অপসংস্কৃতি
১১. না       : মঞ্জুর—নামঞ্জুর, লায়েক—নালায়েক, জায়েজ—নাজায়েজ, হক—নাহক
১২. নির /নিঃ   : দোষি—নির্দোষ, ধনি—নির্ধন
১৩. বি       : তর্ক—বিতর্ক, পক্ষে—বিপক্ষে, মূর্ত—বিমূর্ত, স্মৃতি—বিস্মৃতি
১৪. বে       : আদব—বেয়াদব, কায়দা—বেকায়দা, দখল—বেদখল, সরকারি —বেসরকারি,
    রসিক—বেরসিক, দরদি—বেদরদি, সামাল—বেসামাল, ফাস—বেফাস
১৫. গর       : মিল—গরমিল/অমিল
১৬. সু—কু     : সুঅভ্যাস—কুঅভ্যাস
১৭. স্ব—কু     : স্বভাব—কুভাব
১৮. সু—দুঃ     : সুসময়—দুঃসময়, সুশাসন—দুঃশাসন
১৯. স—দুঃ/দুর  : সবল—দুর্বল
২০. স—অ     : সসীম—অসীম, সম্ভব—অসম্ভব, সবাধ্য/বাধ্য—অবাধ্য, স্বচ্ছ—অস্বচ্ছ,
              সম্মান—অসম্মান, সক্ষম—অক্ষম, সচল—অচল
২১. স—নি     : সদয়—নির্দয়, সবাক—নির্বাক, সাক্ষর—নিরক্ষর, সলাজ—নিলাজ
২২. সং/সম—বি  : সংযুক্ত—বিযুক্ত, সংশ্লিষ্ট—বিশ্লিষ্ট
২৩. সং/সম—প্রসা : সংকুচিত—প্রসারিত
২৪. যুগল শব্দে   : সত্য—মিথ্যা, জীবিত—মৃত, বেহেস্ত —দোজখ, স্বর্গ—নরক, আকাশ—পাতাল
২৫. ভিন্নশব্দ
    দিয়ে     : অগ্র—পশ্চাৎ, অগ্রিম—বকেয়া, অতীত—ভবিষ্যত, ভেতর /অন্তর—বাহির,
             আলো—অন্ধকার, সুন্দর—কুৎসিত/অসুন্দর, উত্থান—পতন, শত্রু—মিত্র,
             মূর্খ—জ্ঞানি, থামা—চলা।
২৬. শূন্য, হীন,
    না, ছাড়া,
    হারা, বিহীন
    ইত্যাদি যোগে : যুক্তিপূর্ণ—যুক্তিশূন্য, জানা—না জানা, খোঁজ—নিখোঁজ, পূন্যবান—পূন্যহীন,
     শূন্য/খালি—পূর্ণ/ভরাট, বিপদ—বিপদহীন।
২৭. পর্যায়মূলক
   বিপরীত শব্দ : ছোট—বড়, ধনি—গরিব, উঁচু—নিচু, না গরম—না ঠান্ডা/গরমও নয়, ঠান্ডাও নয়, খুব গরমও নয়, খুব ঠান্ডাও নয়।
নমুনা
মূলশব্দ   বিপরীত শব্দ        মূলশব্দ      বিপরীত শব্দ       মূলশব্দ      বিপরীত শব্দ
অগ্র      পশ্চাৎ         অদৃশ্য       দৃশ্য             অমৃত       গরল
অধম     উত্তম          অন্তরালে      প্রকাশ্যে           অগ্রজ       অনুজ
অধঃ     ঊর্ধ্ব          অবিকৃত      বিকৃত           অনুরাগ      বিরাগ
আদায়    অনাদায়        অগ্রসর      পশ্চাদপ সরণ       অন্তর       বাহির
অনুলম    প্রতিলম        অল্পবয়স্ক          পরিণতবয়স্ক        অনুগ্রহ      নিগ্রহ
আলো     অন্ধকার        আলোকে      অন্ধকারে          আকর্ষণ      বিকর্ষণ
আজগুবি   সত্য                আশা       নিরাশা           আচার      অনাচার
আসা     যাওয়া         আত্মীয়      অনাত্মীয়                ইতি        শুরু
উৎকর্ষ    অপকর্ষ         ঐচ্ছিক      অনৈচ্ছিক           ঈর্ষা       প্রীতি                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                            
অস্ত      উদয়          ওখানে      এখানে            উৎকৃষ্ট      নিকৃষ্ট
উপসর্গ    অনুসর্গ         ক্ষীণা       স্থুলা              খোঁজ       নিখোঁজ
চয়ন     অপচয়ন        টানা        ঠেলা
খুঁত      নিখুঁত         চপল       গম্ভীর             টাটকা      বাসি
গুরু     লঘু            ছেঁড়া       ভালো            ঠান্ডা       গরম
গোপনীয়   প্রকাশ্য         জাগ্রত       সুপ্ত              ত্যাগ       গ্রহণ
বিষ      অমৃত          মৌলিক      যৌগিক            শ্রেষ্ঠ        নিকৃষ্ট
সঞ্চয়     খরচ          হায়াত      মউত             হাল        সাবেক
স্বার্থ      পরার্থ          হাসা/হাসি    কান্না             হরণ        পূরণ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...