শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বাক্য | বাক্যতত্ব | বাংলা ব্যাকরণ

বাক্য

অর্থবহ কথাকেই বাক্য বলে। ভাষার মূল উপকরণ বাক্য আর বাক্যের মৌলিক উপাদান শব্দ আর শব্দের মূল উপাদান বর্ণ। বর্ণের মূল উপাদান ধ্বনি। অর্থবহ শব্দ বা শব্দসমষ্টি বা কিছু শব্দসমন্বয়ে মনের ভাব প্রকাশের প্রক্রিয়াই বাক্য। অন্যভাবে বলা যায়, পরস্পর অর্থবহ শব্দ দ্বারা গঠিত একটি সম্পূর্ণ বক্তব্যকে বাক্য বলে। সাহিত্যের বাহ্যিক উপকরণের মধ্যে বাক্যই প্রধান। তাই বাক্যকে যতই শুদ্ধ রাখা যায় ততই তার অর্থ ও রস আস্বাদন করতে সহজ হয়। বাংলা বাক্যের ধরন অনেক প্রকার। কোন বাক্যের কর্তা আছে। আবার কোন বাক্যের কর্তা নাই। কোন বাক্যের ক্রিয়া নাই, এসব বাক্যকে অনুক্ত ক্রিয়া বাক্য বলে। যেমন: এই আমাদের ছোট্ট গ্রাম। এ আমার শিক্ষকের কথা। বাংলাদেশ এক দরিদ্র দেশ। তোমার জীবনের লক্ষ্য কী?
ব্যাকরণবিদগণ বিভিন্নভাবে বাক্যের সংজ্ঞা দিয়েছেন। যেমন :
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, যে পদ বা শব্দ-সমষ্টির দ্বারা কোনও বিষয়ে বক্তার ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকটিত হয়, সেই পদ বা শব্দ-সমষ্টিকে বাক্য বা Sentence বলে।

জ্যোতিভূষণ চাকী বলেন, যথাযথ বিন্যস্ত শব্দসমষ্টি যদি একটি সম্পূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে তাকে বাক্য বলে।
ড. সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, পরস্পর অর্থসম্বন্ধ-বিশিষ্ট যে পদগুলোর দ্বারা একটি সম্পূর্ণ ধারণা বা বক্তব্য বা ভাব প্রকাশ পায়, সেই পদগুলোর সমষ্টিকে বাক্য বলে।
বিভিন্নভাবে আমরা বাক্যের ধারণা নিতে পারি। যেমন:
১. অংশগত বাক্য : উদ্দেশ্য/কর্তা ও বিধেয় (কর্ম+ক্রিয়া)
২. খণ্ডগত বাক্য : প্রধান খণ্ডবাক্য, নির্ভরশীল বা আশ্রিত বা পরাধীন খণ্ডবাক্য ও সংযুক্তি শব্দের খণ্ডবাক্য
৩. অর্থগত বাক্য    : বিবৃতিবাচক বা বিবরণবাচক, প্রশ্নবাচক, অনুজ্ঞাবাচক, আশিসবাচক ও আবেগবাচক
৪. গঠনগত বাক্য    : সরল বাক্য, জটিল বাক্য ও যৌগিক বাক্য
৫. তুলনাগত বাক্য   : গুণবাচক বাক্য, উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বাক্য, সবচে তুলনীয় বাক্য
৬. বাচ্যগত বাক্য   : কর্তৃবাচ্য বাক্য ও কর্মবাচ্য বাক্য
৭. উক্তিগত বাক্য   : প্রত্যক্ষ বাক্য ও পরোক্ষ বাক্য
বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়
অংশের দিক দিয়ে বাক্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
ক) উদ্দেশ্য
বাক্যের যে অংশে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় বা যে কাজটি সম্পাদন করে তাকে উদ্দেশ্য বলে। যেমন: হাসান — — । লেখক হাসান — ।
বাক্যের অর্থ ঠিক রেখে মূল উদ্দেশ্যের আগে তার পরিচায়ক বিশেষণ বসিয়ে উদ্দেশ্যকে সম্প্রসারিত করা হয়। যেমন :
সম্প্রসারণরীতি
উদ্দেশ্য সম্প্রসারক
উদ্দেশ্য (কর্তা)
বিধেয় (ক্রিয়া)
১. বিশেষণ যোগে
২. সম্বন্ধ পদ যোগে
৩. সমার্থক বাক্যাংশ যোগে
৪. অসমাপিকা ক্রিয়া বিশেষণ যোগে
৫. বিশেষণ স্থানীয় বাক্যাংশ যোগে
কুখ্যাত
হাসানের
যারা অত্যন্ত পরিশ্রমী (খণ্ডবাক্য)
চাটুকার পরিবৃত হয়েই (খণ্ডবাক্য)
যার কথা তোমরা প্রায়ই বলে থাক
ডাকাতদল
ভাই
তারাই
রহিম
তিনি
ধরা পড়েছে।
পড়ছে।
উন্নতি করে।
থাকেন।
এসেছেন।
খ) বিধেয়
উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয় বা কর্তা যেভাবে কাজ সম্পাদন করে তাকে বিধেয় বলে। যেমন: — পড়ান। — ভাল পড়ান। বাক্যের অর্থ ঠিক রেখে বিধেয় সম্প্রসারণ বসিয়ে বিধেয় ক্রিয়াকে সম্পূরক করা হয়। এরা সমাপিকা ক্রিয়ার পরেও বসতে পারে। যেমন: তিনি প্রখ্যাত ভাষাবিদ ছিলেন অথবা তিনি ছিলেন প্রখ্যাত ভাষাবিদ।
সম্প্রসারণরীতি
উদ্দেশ্য (কর্তা)
বিধেয় সম্প্রসারক
বিধেয় (ক্রিয়া)
১. ক্রিয়া বিশেষণযোগে
২. ক্রিয়া বিশেষণীয়যোগে
৩. কারকযোগে
৪. ক্রিয়া বিশেষণ স্থানীয় বাক্যাংশযোগে
৫. বিধেয় বিশেষণযোগে ঘোড়া
ঘোড়া
জেটবিমান
তিনি ভুবনের
তিনি
ফারজানা
দ্রুত
অতিশয় দ্রুত
ঘাটে ঘাটে
যেভাবেই
আমার বিশেষ
দৌঁড়ায়।
চলে।
ভাসছেন।
হোক আসবেন।
অন্তরঙ্গ বন্ধু (হয়)।
বাক্যের শ্রেণিবিভাগ
গঠন ও অর্থের দিক দিয়ে বাক্যকে  তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
কবিতার বাক্যগুলো সবসময় সরল হয়ে থাকে তবে গদ্যের বাক্য জটিল বা যৌগিক হয়ে থাকে। অনেক লেখক তার গদ্য সরল এবং ছোট ছোট বাক্যে গড়ে তোলেন। তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য হুমায়ূন আহমেদ। একাধিক বাক্যকে একবাক্যে পরিণত করতে গেলে দুটি ক্রিয়ার মধ্যে একটি অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত হয়। বিভিন্নভাবে বাক্য গঠন বা যোজন বা বিযোজন করা যায়। গঠন অনুসারে বাক্য তিন প্রকার। যেমন:
১. সরল বাক্য / Simple Sentence
একটি সমাপিকা ক্রিয়াযুক্ত বাক্যই সরল বাক্য । এখানে একটি বাক্যই থাকবে তাই পরস্পর সম্পর্কিত কোন খণ্ডবাক্য থাকে না। তবে অনেকগুলো অসমাপিকা ক্রিয়াযুক্ত বাক্য থাকতে পারে। এখানে একটি বা একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে। যে বাক্যে একটিমাত্র উদ্দেশ্য (কর্তা) এবং একটিমাত্র বিধেয় (কর্ম + ক্রিয়া) থাকে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন: সে ভাত খায়। তিনি কাছে এসে ভালবেসে মায়া লাগিয়ে চলে গেলেন।
সরল বাক্য  চেনার উপায়গুলো হলো। একটি বাক্য, ক্রিয়া+এ, ক্রিয়া+য়, ক্রিয়া+নি বসে, অসমাপিকা ক্রিয়া ও সমাপিকা ক্রিয়া, না চাইলে, অত ইত্যাদি।
২. যৌগিকবাক্য/ Compound Sentence
পরস্পর নির্ভরহীন অর্থাৎ সম্পূর্ণ বা নিরপেক্ষ একাধিক খণ্ডবাক্য মিলে যে বাক্য গঠিত হয় সেই বাক্যই যৌগিকবাক্য। এইখানে একাধিক খণ্ডবাক্য থাকতে হবে, বাক্যগুলো পরস্পর নির্ভরহীন অর্থাৎ সম্পূর্ণ বা নিরপেক্ষ একাধিক খণ্ডবাক্য হতে হবে এবং বাক্যগুলো যুক্ত করার জন্য যৌগিকচিহ্ন/যৌগিক যোজক থাকতে হবে। দুই বা এর অধিক সরল বাক্য  বা জটিলবাক্য মিলিত হয়ে যে বাক্য তৈরি করে তাকে যৌগিক বাক্য বলে। অথবা দুটি বাক্যকে এবং, ও, কিন্তু, অথবা, অথচ, কিম্বা যোজক দ্বারা যুক্ত করলে যৌগিক বাক্য হয়। যেমন: সে ঠিক মতো স্কুলে যায় এবং পড়া শেষ করে। সে গরিব কিন্তু সৎ।
যৌগিকচিহ্ন: এবং, আর, ও, কিন্তু, তাই, তাহলে, সেহেতু, কারণে, ফলে, তবে, তবু, তবুও, পর, নইলে, আগে, তখনই, ফল/ ক্রিয়া+ও, কেবল, বটে— তবে, শুধু—আরও/ও, জন্য, উদ্দেশ্যে, বলে, সুতরাং, অন্যথায়, অথবা ইত্যাদি।
৩. জটিলবাক্য/মিশ্রবাক্য/ Complex Sentence
পরস্পর নির্ভরশীল একাধিক খণ্ডবাক্য মিলে যে বাক্য গঠিত হয় সেই বাক্যই জটিলবাক্য। এইখানে একাধিক খণ্ডবাক্য থাকতে হবে, বাক্যগুলো পরস্পর নির্ভরশীল হতে হবে এবং বাক্যগুলো যুক্ত করার জন্য জটিলচিহ্ন/জটিল যোজক থাকতে হবে। যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্য এবং এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হয় তাকে জটিল বা মিশ্রবাক্য বলে। দুটি বাক্য জটিলচিহ্ন দ্বারা গঠিত হলে জটিল বাক্য হবে। যেমন: যে পরিশ্রম করে, সে সুখ লাভ করে। আমি দেখলাম, খেলা শেষ। যেমন: যে সবসময় এখানে আসে সে আমার ছোট ভাই।
জটিলচিহ্ন: যে/যা/ যে— তাকে, যে—সে/সেই, যত—তত, /যতদিন—ততদিন, যেহেতু—সেহেতু, যেই— অমনি, সে—কারণ, সে—বলে, যখন— তখন, যদি, যদিও, যদিও—তবুও, তবুও ইত্যাদি। এসব চিহ্নের আগে বা পরে কোন যতি বসে না।
বাক্যেরূপান্তরের নিয়ম
কিছু নিয়মের মাধ্যমে এক বাক্য থেকে অন্য বাক্যে রূপান্তর করাকে বাক্যরূপান্তর বলে। যেমন:
ক) সরল বাক্যকে জটিল বা মিশ্র বাক্যে রূপান্তর  
নিয়ম
সরল বাক্য
জটিলবাক্য
যে— তাকে
(একবচন)
ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।
যে ভিক্ষা চায় তাকে ভিক্ষা দাও।
/যে ভিক্ষুক তাকে ভিক্ষা দাও।
যেসব—তাদের
সংস্কৃতভাষা থেকে হুবহু আসা শব্দই সংস্কৃত শব্দ।
যেসব শব্দ সংস্কৃতভাষা থেকে হুবহু এসেছে তাদের সংস্কৃত শব্দ বলে।
যে— সে
সে আমার ছোট ভাই।
যে এসেছিল সে আমার ছোট ভাই।
যেই— সেই
তাদের দেখামাত্র আমরা রওনা দিলাম।
যেই তাদের দেখা পেলাম সেই আমরা রওনা হলাম।
যত— তত
যতদিন— ততদিন
ইচ্ছামত খাও।
সে আমাকে অনেকদিন ইংরেজি শিখিয়েছে।
আজীবন তোমার ঋণের কথা ভুলব না বা ঋণ স্বীকার করব।
যত পারো তত খাও।
যতদিন তার কাছে গিয়েছি ততদিন সে আমাকে ইংরেজি শিখিয়েছে।
যতদিন জীবিত থাকব ততদিন তোমার ঋণের কথা ভুলব না বা ঋণ স্বীকার করব।
যারা— তারা
(বহুবচন)
তারা খুব বুদ্ধিমান।
ভালো ছেলেরা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।
বুদ্ধিহীনরা মাইলফলক কবিতা রচনা করতে পারে না।
যারা এসেছিল তারা সবাই বুদ্ধিমান।
যারা ভাল ছেলে তারা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।
যারা বুদ্ধিহীন তারা মাইলফলক কবিতা রচনা করতে পারে না।
/যাদের বুদ্ধি নাই তারা মাইলফলক কবিতা রচনা করতে পারে না।

খ) সরল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
সরল বাক্য
যৌগিকবাক্য
এবং
হুমায়ূন আহমেদ বিখ্যাত পরিচালক।
হুমায়ূন আহমেদ বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক।
হুমায়ূন আহমেদ বিখ্যাত পরিচালক এবং কথাসাহিত্যিক।
হুমায়ূন আহমেদ শুধু বিখ্যাত পরিচালকই নয় বিখ্যাত সাহিত্যিকও।

তাই/সেহেতু
/কারণে/ফলে
আমি অসুস্থতার জন্য উপস্থিত থাকতে পারিনি।
আমি অসুস্থ ছিলাম তাই উপস্থিত থাকতে পারি নাই। আমি অসুস্থ থাকার কারণে (থাকায়) অনুপস্থিত ছিলাম।
কিন্তু/তবু
/তবুও
তার বয়স কম হলেও ভাল আলোচনা করে।
তার বয়স কম কিন্তু তবুও সে ভালো আলোচনা করে।
গ) জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
জটিলবাক্য
যৌগিকবাক্য
যদি— তাহলে
/তবে
যদি দোষ স্বীকার করো তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেয়া হবে না।
দোষ স্বীকার কর এবং তোমাকে কোন শাস্তি দেয়া হবে না।
যদিও— তথাপি
তিনি গরিব কিন্তু সৎ।
যদিও তিনি গরিব তবুও তিনি সৎ।
এ/এই— সেটি
এ— সেটি
এ/এই গ্রামে একটি পাঠাগার আছে সেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।  
সুতরাং এই গ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

যখন— তখন
আমি বাড়ি পৌঁছলাম এবং মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।
বিপদ ও দুঃখ এক সঙ্গে আসে।
যখন আমি বাড়ি পৌঁছলাম তখন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।
যখন বিপদ আসে তখন দুঃখ আসে।
যেমন—তেমনি
ছেলেটি বুদ্ধিমান ও দুঃসাহসী।
ছেলেটি যেমন বুদ্ধিমান তেমনি দুঃসাহসী।
ও—র
ও— ই
আমরাও ভালো তারাও ভালো।
আমরাও ভালো সকলেই ভালো।
আমরা যখন ভালো থাকি তখন সকলেই ভালো থাকে।
বাক্য বিশ্লেষণ
বাক্যের বিভিন্ন অংশ পৃথক করে তাদের পারস্পারিক সম্বন্ধ নির্ণয় প্রণালীকে বাক্য বিশ্লেষণ বলে। গঠনগতভাবে বাক্যকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। যেমন:
সরল বাক্য
উদ্দেশ্য সম্প্রসারক
উদ্দেশ্য (কর্তা)
বিধেয় (ক্রিয়া)
বিধেয় সম্প্রসারক
১. ---
২. ---
৩. ---
৪. ---
৫. তার সুন্দর
৬. মহারাজ শুদ্ধোধনের পুত্র
৭. ইসলামের প্রথম খলিফা
---
হাসান
হাসান
হাসান/লেখক হাসান
মুখখানি
শাক্যসিংহ
হযরত আবু বকর (রা.)
---
---
বই
গদ্য লিখতে
কেমনে
জীবনে সংসার
দীনের জন্য তার সর্বস্ব
পড় /লেখ।
পড়ান।
পড়ান।
পছন্দ করেন।
ভুলে থাকি।
ত্যাগ করেন।
দান করেন।
জটিল বাক্য ও যৌগিক বাক্য
এখানে প্রধান ও খণ্ডবাক্যকে নির্ণয় করে বিশ্লেষণ করতে হয়। জটিল বাক্যের সংযোজক যোজক (যদিও) বাক্যের প্রথমেও বসতে পারে। যেমন :              
উদ্দেশ্য সম্প্রসারক
উদ্দেশ্য (কর্তা)
বিধেয় সম্প্রসারক
বিধেয় (ক্রিয়া)
সংযোজক যোজক
১. ---
২. ---

কন্যার বাপ
বরের বাপ
ত্যাগ
জ্ঞান
সবুর করিতে
সবুর করিতে
মানুষকে মুক্তির পথে
মানুষকে শান্তিতে    
পারিতেন
চাহিলেন না।
পরিচালিত করে
রাখে।
কিন্তু

এবং

বাক্য রূপান্তর
তবে জটিল ও যৌগিক বাক্যকে সরল করে আরো সুন্দর বাক্যে পরিণত করা যায়। যেমন: কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিলেও বরের বাপ তা চাহিলেন না। অথবা শুধু ত্যাগ না জ্ঞানও মানুষকে মুক্তির পথে পরিচালিত করে/ত্যাগ ও জ্ঞান দুটিই মানুষকে মুক্তির পথে পরিচালিত করে। বিভিন্ন নিয়মে বাক্য রূপান্তর করা যায়। যেমন :
ক) সরল বাক্য থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর
সরল বাক্য   : শিক্ষিত লোককে সবাই শ্রদ্ধা করে।
জটিল বাক্য   : যে লোক শিক্ষিত তাকে সবাই শ্রদ্ধা করে।
সরল বাক্য   : তিনি আসলে আর চিন্তা কী?
জটিল বাক্য   : যদি তিনি আসেন তাহলে আর চিন্তা কী?
সরল বাক্য   : ঈদের ছুটিতে আমরা বাড়ি যাব।
জটিল বাক্য   : যখন ঈদ আসবে তখন আমরা বাড়ি যাব।
সরল বাক্য   : তোমার কথা আজীবন মনে থাকবে।
জটিল বাক্য   : যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন তোমার কথা মনে থাকবে।
সরল বাক্য   : সৎ লোক কখনও মিথ্যার সঙ্গে আপোস করে না।
জটিল বাক্য   : যে সৎ লোক সে কখনও মিথ্যার সঙ্গে আপোস করে না।
সরল বাক্য   : অন্ধকে আলো দাও।
জটিল বাক্য   : যে অন্ধ তাকে আলো দাও।
খ) জটিল বাক্য থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর
জটিল বাক্য   : যখন তার শৈশবকাল তখন তার বাবা মারা যান।
সরল বাক্য   : শৈশবে তার বাবা মারা যায়।
জটিল বাক্য   : যেহেতু যানজট সেহেতু গাড়ি চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
সরল বাক্য   : যানজট থাকায় গাড়ি চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
জটিল বাক্য   : যদিও লোকটি গরিব তথাপি সে অতিথিপরায়ণ।
সরল বাক্য   : লোকটি গরিব হলেও অতিথিপরায়ণ।
জটিল বাক্য   : যতই পরিশ্রম করবে ততই ফল পাবে।
সরল বাক্য   : পরিশ্রম করলে ফল পাবে।
গ) সরল বাক্য থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
সরল বাক্য   : বাবা আমাকে একশ টাকা দিয়ে বাজারে যেতে বললেন।
যৌগিক বাক্য : বাবা আমাকে একশ টাকা দিলেন এবং বাজারে যেতে বললেন।
সরল বাক্য   : পরিশ্রম করলে ফল পাবে।
যৌগিক বাক্য : অধিক পরিশ্রম করবে এবং অধিক ফল পাবে।
ঘ) যৌগিক বাক্য থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর
যৌগিক বাক্য : তিনি বেড়াতে গেলেন এবং কেনাকাটা করলেন।
সরল বাক্য   : তিনি বেড়াতে গিয়ে কেনাকাটা করলেন।
যৌগিক বাক্য : ছেলেটি গরিব কিন্তু মেধাবী।
সরল বাক্য   : ছেলেটি গরিব হলেও মেধাবী।
যৌগিক বাক্য : এখনই যাও নইলে তার দেখা পাবে না।
সরল বাক্য   : এখনই না গেলে তার দেখা পাবে না।
ঙ) জটিল বাক্য থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
জটিল বাক্য   : যদিও আমি তাকে অনেক নিষেধ করেছি তবুও কোন ফল হয়নি।
যৌগিক বাক্য : আমি তাকে অনেক নিষেধ করেছি কিন্তু কোন ফল হয়নি।
জটিল বাক্য   : সে যেমন কৃপণ তেমন চালাক।
যৌগিক বাক্য : সে কৃপণ এবং চালাক।
জটিল বাক্য   : আমরা যখন স্টেশনে পৌঁছলাম তখন গাড়ি ছেড়ে দিল।
যৌগিক বাক্য : আমরা স্টেশনে পৌঁছলাম আর গাড়ি ছেড়ে দিল।
জটিল বাক্য   : আমরা যখন বাড়ি এসেছি তখন রাত্রি হয়েছে।
যৌগিক বাক্য : আমরা বাড়ি এসেছি আর রাত্রি হয়েছে।
জটিল বাক্য   : পিতা যখন আছেন তখন পুত্রকে খোঁজ কেনো?
যৌগিক বাক্য : পিতা আছেন সুতরাং পুত্রকে খোঁজ কেনো?
জটিল বাক্য   : যে রক্ষক সেই ভক্ষক।
যৌগিক বাক্য : সে রক্ষক এবং ভক্ষক।
চ) যৌগিক বাক্য থেকে মিশ্র বা জটিল বাক্যে রূপান্তর
যৌগিক বাক্য      : তিনি বিদ্বান বটে কিন্তু বড়ই দুর্বিনীত।
মিশ্র বা জটিল বাক্য : যদিও তিনি বিদ্বান তবুও বড়ই দুর্বিনীত।
যৌগিক বাক্য      : বিদ্বান হও তবে লোকে শ্রদ্ধা করবে।
মিশ্র বা জটিল বাক্য : যদি বিদ্বান হও তবে লোকে শ্রদ্ধা করবে।
যৌগিক বাক্য      : নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করো স্বাস্থ্য ভালো হবে।
মিশ্র বা জটিল বাক্য : যদি নিয়মিত ব্যায়াম কর তাহলে স্বাস্থ্য ভাল হবে।
যৌগিক বাক্য      : দোষ করেছে অতএব শাস্তি পাবে।
মিশ্র বা জটিল বাক্য : যখন দোষ করেছে তখন শাস্তি পাবে।
বাংলায় সাপেক্ষ বাক্য
বাংলা ভাষায় সাপেক্ষ বাক্যের সংগঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। বাক্যের একটা অংশের সম্পাদন যখন অন্য আর একটা অংশের উপর নির্ভর করে তখন সেই বাক্যকেই বলে সাপেক্ষ বাক্য। একে শর্তবাক্য /conditional sentence বাক্য বলতে পারি। সাপেক্ষ জটিল বাক্যের স্বাধীন খণ্ডবাক্যে ‘যদি’, ‘যখন’ ‘যেদিন’ ইত্যাদি সাপেক্ষ পদ বসে এবং অধীন বা আশ্রিত খণ্ডবাক্যে ‘তবে’, ‘তাহলে’, ‘সেদিন’ ইত্যাদি ক্রিয়াবিশেষণ বাচক পদ বসে। আবার শুধু ‘যদি-তবে’ নয়, অন্য সাপেক্ষ পদ দিয়েও সাপেক্ষ বাক্য হয়। যেমন :
১. যদি তুমি যাও তবে আমিও যাব।
২. যদি আমায় তুমি বাঁচাও তবে তোমার নিখিল ভুবন ধন্য হবে।
৩. এই যদি তোমার মনে ছিল তবে আগেই তা বলতে পারতে।
৪. না বাঁচাবে আমায় যদি মারবে কেন তবে?
৫. যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ।
৬. যেদিন তোমার ইচ্ছে হবে সেদিন এসো।
৭. যেই বৃষ্টি এলো অমনি সে ঘরে ঢুকলো।
বাক্যের অর্থগত প্রকরণ
মনের ভাব প্রকাশ করতে ভাষা লাগে। ভাষা শব্দ ও বাক্যের মাধ্যমে প্রকাশ লাভ করে। যেমন :  
১. বিবৃতিবাচক বাক্য: ঘটনা, ভাব, বক্তব্য বা তথ্যবহুল বাক্যকে বিবৃতিবাচক বা বর্ণনাবাচক বাক্য বলে। যেমন: আমি ঢাকায় যাব। আমি ঢাকায় যাব না।
২. প্রশ্নবাচক বাক্য: ঘটনা, ভাব, বক্তব্য বা তথ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তাকে প্রশ্নবাচক বাক্য বলে। যেমন: আমি কি ঢাকায় যাব? আমি কি ঢাকায় যাব না? আমি কোথায় যাব?
৩. অনুজ্ঞাবাচক বাক্য: আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, অনুরোধ, অনুমতি, বা আমন্ত্রণমূলক বাক্যকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে। যেমন: পড়, বৃষ্টিতে ভিজবে না, দয়াকরে একগ্লাস পানি দাও।
৪. আশিসবাচক বাক্য: ইচ্ছা, প্রার্থনা বা আশিসমূলক বাক্যকে ইচ্ছা বা প্রার্থনাবাচক বাক্য বলে। যেমন: দীর্ঘজীবী হও, তোমার মঙ্গল হোক।
৫. আবেগবাচক বাক্য: দুঃখ, শোক, আনন্দ, বিস্ময়, ভয়, লজ্জা, ঘৃণা, করুণা বা প্রশংসামূলক বাক্যকে আবেগবাচক বাক্য বলে। যেমন: ছি! কত লজ্জা। হায়! সে কত দুখী। বাহ! পাখিটা কত সুন্দর।
অর্থগত বাক্যের রূপান্তর
অর্থের রূপান্তর না করে একপ্রকার বাক্যকে অন্যপ্রকার বাক্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াই বাক্যরূপান্তর। যেমন:
বিবৃতিবাচক বাক্য থেকে প্রশ্নবাচক : আমি ঢাকা যাব—আমি কি ঢাকা যাব না? আমি ঢাকায় যাব না—আমি কি ঢাকা যাব?
বিবৃতিবাচক বাক্য থেকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য: তুমি বইটি পড়—বইটি পড়।
                             তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে না—বৃষ্টিতে ভিজবে না।
                             দয়া করে তুমি একগ্লাস পানি দাও—দয়াকরে একগ্লাস পানি দাও।
বিবৃতিবাচক বাক্য থেকে ইচ্ছাবাচক বাক্য    : আমাদের কবি দীর্ঘজীবী হউক—দীর্ঘজীবী হউক।
বিবৃতিবাচক বাক্য থেকে বিস্ময়বাচক বাক্য: অনেক সুন্দর একটি পাখি— বাহ! পাখিটা কত সুন্দর।
অর্থভিত্তিক বাক্য রূপান্তর
অর্থভিত্তিক বাক্য পরিবর্তন হলো অর্থ অপরিবর্তিত রেখে অস্ত্যক, নর্ঙ্থক, প্রশ্নবোধক, অনুজ্ঞাবাচক, প্রার্থনাবাচক, আবেগবাচক ইত্যাদি বাক্যকে অর্থ ভিত্তিক ভিন্ন প্রকরণের বাক্যে রূপান্তরিত করা। এভাবে অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে, নেতিবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে, প্রশ্নবাচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে, নির্দেশক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে, আবেগবাচক বাক্যেকে নির্দেশক বাক্যে, নির্দেশক বাক্যকে অনুজ্ঞাবাচক বা প্রার্থনাবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। যেমন:
ক) অস্তি থেকে নেতিবাচক বাক্য রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. একটি না যোজক এবং নয় বা নাই (ক্রিয়ার) আগমন ঘটবে।
৩. এই না-বাচক যোজক বা ক্রিয়া ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশক বাক্যের মূল বিশেষ্য বা বিশেষণটির বিপরীতার্থক শব্দ ব্যবহার করতে হবে। যেমন: সে বুদ্ধিমান। অর্থাৎ সে নির্বোধ নয় বা বুদ্ধিহীন নয়।
৪. কোন কোন ক্ষেত্রে মূল বাক্যের বিশেষ্য বা বিশেষণ অপরিবর্তিত রেখে-ছাড়া, ভিন্ন, ব্যতীত, ব্যতিরেকে ইত্যাদি যোজক ব্যবহার করা যায়। যেমন: এটা দক্ষ লোকের কাজ। অর্থাৎ এটা দক্ষ ছাড়া অন্য লোকের কাজ নয়।
৫. মনে রাখা প্রয়োজন দুটি না-বাচক সমান একটি হ্যাঁ-বাচক (Two negatives make an affirmative)|
নমুনা
অস্তিবাচক    : তিনি সচ্চরিত্র ব্যক্তি।
নাস্তিবাচক    : তিনি অসচ্চরিত্র ব্যক্তি নন।
অস্তিবাচক    : পাহাড়তলিতে অনেক পোড়ো বাগান আছে।
নাস্তিবাচক    : পাহাড়তলিতে পোড়ো বাগানের অভাব নাই।
অস্তিবাচক    : দরিদ্র সেবাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
নাস্তিবাচক    : দরিদ্র সেবা অপেক্ষা বড় ধর্ম আর কিছুই নাই।
অস্তিবাচক    : সে কথাই এরা ভাবে।
নাস্তিবাচক    : সে কথাই এরা না ভেবে পারে না।

খ) নাস্তি বা নেতিবাচক বাক্য হতে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. না বাচক যোজক বা ক্রিয়া বিলুপ্ত হবে।
৩. নর্ঙ্থক বাক্যের মূল বিশেষ্য বা বিশেষণের বিপরীত শব্দ বসবে।
৪. বাক্যটি যদি মিশ্র বা জটিল হয় তবে অপ্রধান, পরনির্ভর অস্তিবাচক উপবাক্যটিকে নর্ঙ্থক এবং প্রধান স্বনির্ভর নর্ঙ্থক উপবাক্যটিকে অস্তিবাচক বাক্যেরূপান্তরিত করতে হবে।
নমুনা
নাস্তিবাচক বাক্য : এমন কোন লোক নাই যিনি দেশকে ভালোবাসেন না।
অস্তিবাচক বাক্য : সকলেই দেশকে ভালোবাসেন।
নাস্তিবাচক বাক্য : কমলাকান্তের মনের কথা এ জন্মে আর বলা হলো না।
অস্তিবাচক বাক্য : কমলাকান্তের মনের কথা এ জন্মে অব্যক্তরয়ে গেল।
নাস্তিবাচক বাক্য : সত্যের নাই পরাজয়।
অস্তিবাচক বাক্য : সত্যের জয় আছেই।

গ) নির্দেশক বাক্যকে প্রশ্নবোধক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. কি, কী, কে, কবে, কোথায়, কখন ইত্যাদি প্রশ্নবোধক সর্বনাম বা ক্রিয়া বিশেষণ যোগ করতে হয়।
২. অস্ত্যর্থক বাক্যের প্রশ্নরূপে একটি না-বাচক যোজক কখনো ক্রিয়ার পরে বসাতে হয়।
৩. নাস্ত্যর্থক বাক্যের প্রশ্নরূপান্তরে না-বাচক শব্দটি বাদ দিতে হয়।
৪. শেষে প্রশ্ন বোধক চিহ্ন বসাতে হয়।
নমুনা
নির্দেশক বাক্য    : আমি তখন জাগ্রত ছিলাম।
প্রশ্নবোধক বাক্য   : আমি কি তখন জাগ্রত ছিলাম না?
নির্দেশক বাক্য    : সৎ বা অসৎ কর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করতে হবে।
প্রশ্নবোধক বাক্য   : সৎ বা অসৎ কর্মের ফল কি অবশ্যই ভোগ করতে হবে না?

ঘ) প্রশ্নবোধক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. ‘কি’ যোজক বিলুপ্ত হবে।
৩. সঙ্গে সঙ্গে না বাচক যোজক লুপ্ত হবে।
৪. জিজ্ঞাসা চিহ্নের (?) জায়গায় দাঁড়ি (।) হবে।
বাক্যটি যদি নর্ঙ্থক করতে হয় তবে-
১. অর্থ অপরিবর্তিত রাখতে হবে।
২. ‘কি’ যোজক বাদ দিতে হবে।
৩. সঙ্গে সঙ্গে একটি না বাচক যোজক আনতে হবে।
৪.জিজ্ঞাসা চিহ্নের (?) জায়গায় দাঁড়ি (।) বসবে।
৫. জটিল ও যৌগিক বাক্যের ক্ষেত্রে প্রধান স্বনির্ভর উপবাক্যটি নর্ঙ্থক উপবাক্যে রূপান্তরিত হবে।
নমুনা
প্রশ্নবোধক বাক্য : শরৎচন্দ্র মহাশয়ের নাম কে শোনেনি?
নির্দেশক বাক্য : শরৎচন্দ্র মহাশয়ের নাম সকলেই শুনেছে।
প্রশ্নবোধক বাক্য : কে জানে অসিত কবে আসবে?
নির্দেশক বাক্য : অসিত কবে আসবে এ কথা কেউ জানে না।

ঙ) অনুজ্ঞাবাচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. ক্রিয়ার অনুজ্ঞারূপ পরিবর্তিত হয়ে নির্দেশক (অস্তি বা নেতি)রূপ যুক্ত হবে। এ ব্যপারে সাধারণত ভাব বাচ্যের ক্রিয়া পদ ব্যবহৃত হয়। কোথাও তা না হলে কর্তা-অনুসারে অনুরোধ, উপদেশ, আদেশ, পরামর্শমূলক ক্রিয়া পদ ব্যবহার করতে হবে।
নমুনা
অনুজ্ঞাবাচক বাক্য    : দুর্জনকে দূরে রাখিও।
নির্দেশক বাক্য      : দুর্জনকে দূরে রাখা উচিত।
অনুজ্ঞাবাচক বাক্য    : চুপ কর।
নির্দেশক বাক্য      : কথা বলিও না।
অনুজ্ঞাবাচক বাক্য    : দরিদ্রের সেবা করবে।
নির্দেশক বাক্য      : দরিদ্রের সেবা করা কর্তব্য।

চ) নির্দেশক বাক্য থেকে কার্যকারণাত্মক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. নিয়ম, স্বীকৃতি, সংকেত বা শর্ত আরোপিত হবে।
৩. মূল ক্রিয়া অপরিবর্তিত থাকবে।
৪. সংকেত বা শর্তাদি আরোপ করতে হলে ‘লে’ প্রত্যয়ান্ত একটি অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করতে হবে।
নমুনা
১. ঘরে আনামাত্র সবকিছুই তাদের। >ঘরে আনলে সবকিছুই তাদের।

ছ) কার্যকারণাত্মক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. মূল ক্রিয়া অপরিবর্তিত থাকবে।
৩. শর্তমূলক অসমাপিকা ক্রিয়া বিশেষ্য পদে (কিংবা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য) রূপান্তর হবে।
নমুনা
১. এসব চিন্তা করলে মনে শান্তি আসে। >এসব চিন্তায় মনে শান্তি আসে।

জ) নির্দেশক বাক্য থেকে সন্দেহদ্যোতক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. ‘বুঝি’, ‘হয়তো’, ‘সম্ভবত’, ‘নিশ্চয়’ ইত্যাদি শব্দের যেকোনো একটি ব্যবহৃত হবে।
নমুনা
১. তার দুর্নিবার লোভরিপুই তাদের পরিতাপ প্রাপ্তির একমাত্র কারণ। >তার দুর্নিবার লোভরিপু নিশ্চয়ই তাদের পরিতাপ প্রাপ্তির একমাত্র কারণ।
২. আমরা পরের উপকার করব মনে করলেই উপকার করতে পারি না। >আমরা পরের উপকার করব মনে করলেই বোধহয় উপকার করতে পারি না।

ঝ) সন্দেহদ্যোতক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. ‘বুঝি’, ‘হয়তো’, ‘বোধহয়’, ‘সম্ভবত’, ‘নিশ্চয়’, ‘অবশ্য’ ইত্যাদি শব্দ বিলুপ্ত হবে।
৩. কর্তৃপদ বা অনুরূপ পদের সঙ্গে একটি নিশ্চয়সূচক ‘ই’ যোজক যুক্ত হয়।
নমুনা
১. সেগুলো বোড়াটোড়া হবে বোধ হয়। > সেগুলো বোড়াটোড়াই হবে।

ঞ) নির্দেশক বাক্য থেকে প্রার্থনাবোধক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কালের ক্রিয়াকে ‘উক’ বা ‘উন’ বিভক্ত্যন্ত হয়। যেমন: করুক, করুন। ইচ্ছামূলক বর্তমান কালের ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করতে হবে।
নমুনা
১. যম এদের ভুলে থাকবেন। > যমেএদের ভুলে থাকুন।
২. সেইদিন সমস্যার সমাধান হবে। > সেইদিনই সমস্যার সমাধান হউক।

ট) প্রার্থনাবোধক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. ইচ্ছাবাচক বর্তমান কালের ক্রিয়া ভবিষ্যতকালের নির্দেশক ক্রিয়ার রূপান্তরিত হবে।
৩. প্রয়োজনবোধে ‘বক্তা কামনা করেন’ ইত্যাদি উপবাক্য যোগ করা যায়।
নমুনা
১. সমস্তলোক আমার আয়ত্তর বশীভূত থাকুক। > সমস্তলোক আমার আয়ত্ত ও বশীভূত থাকবে।
২. দেব দিবাকর আগে যাক অস্তাচলে। > দেব দিবাকর আগে যাবে অস্তাচলে।
৩. সন্ধ্যার তিমির আসুক নিবিড় হয়ে। > সন্ধ্যার তিমির আসবে নিবিড় হয়ে।

ঠ) নির্দেশক বাক্যকে বিস্ময়বাচক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. বাক্যের মধ্যে একটি বিস্ময়বোধক যোজক পদ যেমন: আহা, হায় ইত্যাদি যুক্ত করতে হবে।
৩. বিশেষণ পদের আগে একটি ‘কী’ বিশেষণীয় বিশেষণ বসবে।
৪. বাক্যের শেষে একটি আশ্চর্যবোধক (!) চিহ্ন বসবে।
নমুনা
নির্দেশক বাক্য      : দৃশ্যটি বড় চমৎকার।
বিস্ময়বাচক বাক্য    : আহা! কী চমৎকার দৃশ্য।
নির্দেশক বাক্য      : দৃশ্যটি বড় করুণ।
বিস্ময়বাচক বাক্য    : দৃশ্যটি কী করুণ!
নির্দেশক বাক্য      : এতো ভয়ানক দুঃখের কথা।
বিস্ময়সূচক বাক্য         : কী ভয়ানক দুঃখের কথা!

বিস্ময়বাচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
বিস্ময়বাচক বাক্য    : বাড়িটি কী সুন্দর!
নির্দেশক বাক্য      : বাড়িটি বড় সুন্দর।
বিস্ময়বাচক বাক্য    : ত্যাগের কী অপূর্ব মহিমা!
নির্দেশক বাক্য      : ত্যাগের মহিমা বড় অপূর্ব।

ড) ইচ্ছাবাচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. ইচ্ছাবাচক বর্তমান কালের ক্রিয়া ভবিষ্যৎ কালের নির্দেশক ক্রিয়ায় রূপান্তরিত হবে।
৩. প্রয়োজন বোধে বক্তা ‘কামনা করেন’ ইত্যাদি উপবাক্য যুক্ত করতে হবে।
নমুনা
ইচ্ছাবাচক বাক্য : তুমি দীর্ঘজীবী হও।
নির্দেশক বাক্য : তোমার দীর্ঘজীবন কামনা করি।
ইচ্ছাবাচক বাক্য : জয় হোক ত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...