শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বীজগাণিতিক রাশি সূত্রাবলী

বীজগাণিতিক রাশিঃ

প্রক্রিয়া চিহ্ন সংখ্যানির্দেশক অক্ষর প্রতিক এর অর্থবোধক বিন্যাসকে বীজগাণিতিক রাশি বলে । যেমন 2a+3b-4c একটি বীজগাণিতিক রাশি ।
একটি বীজগাণিতিক রাশি তে ধনাত্মক, ঋণাত্ম্‌ গুণ, ভা্‌ সমান চিহ্ন, ইত্যাদি থাকে এবং চলক ও ধ্রুবক থাকে ।
চলক(Variables): বীজগাণিতিক রাশিতে যে উপাদান গুলোর মান নির্দিষ্ট না মান এর পরিবর্তন হয় যেমন উপরের উদাহরনে a , b ও c এদের মানের পরিবতন হয় । তাই এদের চলক বলে । 
ধ্রুবক (Constant) : বীজগাণিতিক রাশিতে ব্যবহৃত সংখ্যাগুলো ধ্রুবক এদের মান নির্দিষ্ট ।


বীজগাণিতিক সূত্রাবলিঃ

বীজগাণিতিক প্রতিক দ্বারা প্রকাশিত যেকোনো সাধারণ নিয়ম বা সিধান্তকে বীজগাণিতিক সুত্র বলা হয় । 
সুত্র ১ । (a+b)^2=a^2+2ab+b^2
সুত্র ২ । (a-b)^2=a^2-2ab+b^2
এই দুটি বর্গের সুত্র থেকে কিছু অনুসিধান্ত প্রমাণ করা যায় যেমনঃ
১ । a^2+b^2=(a+b)^2-2ab=(a-b)^2+2ab
২ । (a+b)^2=(a-b)^2+4ab অথবা (a-b)^2=(a+b)^2-4ab
সুত্র এক ও দুই থেকে খুব সহজেই এই অনুসিধান্তগুলো প্রমাণ করা যায় 
সুত্র ১ থেকে পাই 
(a+b)^2=a^2+b^2+2ab
বা, (a+b)^2-2ab=a^2+b^2
 herefore a^2+b^2=(a+b)^2-2ab
আবার প্রথম সুত্র থেকে পাই 
(a+b)^2=a^2+2ab+b^2
বা, (a+b)^2=a^2+2ab+b^2-2ab+2ab
বা, (a+b)^2=a^2-2ab+b^2+4ab
 herefore  (a+b)^2=(a-b)^2+4ab     ( প্রথম সুত্র থেকে পাই (a-b)^2=a^2-2ab+b^2
আবার 
অনুসিধান্ত ৩ । a^2+b^2=frac{(a+b)^2+(a-b)^2}{2}
প্রমাণঃ 
সুত্র ১ ও সুত্র ২ যোগ করি তাহলে 
(a+b)^2+(a-b)^2=a^2+2ab+b^2+a^2-2ab+b^2
বা, (a+b)^2+(a-b)^2=2a^2+2b^2
বা, 2(a^2+b^2)=(a+b)^2+(a-b)^2
 herefore a^2+b^2=frac{(a+b)^2+(a-b)^2}{2}
অনুসিধান্ত ৪ ।  herefore ab=left (frac{a+b}{2} 
ight )^2-left ( frac{a-b}{2} 
ight )^2
সুত্র ১ ও সুত্র ২ বিয়োগ করে পাই ।
(a+b)^2-(a-b)^2=a^2+2b+b^2-a^2+2ab-b^2
বা, (a+b)^2-(a-b)^2=4ab
বা, 4ab=(a+b)^2-(a-b)^2
 herefore ab=left (frac{a+b}{2} 
ight )^2-left ( frac{a-b}{2} 
ight )^2

ঘন সংবলিত সূত্রাবলিঃ

সুত্র ১ । (a+b)^3=a^3+3a^2b+3ab^2+b^3
সুত্র ২ । (a-b)^3=a^3-3a^2b+3ab^2-b^3
সুত্র ১ এর প্রমাণঃ 
(a+b)^3=(a+b)(a+b)^2
                =(a+b)(a^2+2ab+b^2)
                =a(a^2+2ab+b^2)+b(a^2+2ab+b^2)
                =a^3+2a^2b+a^2b+ab^2+2ab^2+b^3
                =a^3+3a^2b+3ab^2+b^3
               =a^3+b^3+3ab(a+b)
সুত্র ২ এর প্রমাণঃ 
(a-b)^3=(a-b)(a-b)^2
                =(a-b)(a^2-2ab+b^2)
               =a(a^2-2ab+b^2)-b(a^2-2ab+b^2)
              =a^3-2a^2b+ab^2-a^2b+2ab^2-b^3
             =a^3-3a^2b+3ab^2-b^3
             =a^3-b^3-3ab(a-b)
অনুসিধান্ত a^3+b^3=(a+b)(a^2-ab+b^2)
প্রমাণঃ সুত্র ১ থেকে 
a^3+b^3=(a+b)^3-3ab(a+b)
              =(a+b){(a+b)^2-3ab}
             =(a+b)(a^2+2ab+b^2-3ab)
            =(a+b)(a^2-ab+b^2)
অনুরূপভাবে a^3-b^3=(a-b)(a^2+ab+b^2)

উৎপাদকে বিশ্লেষণঃ

কোনো রাশি দুই বা ততোধিক রাশির গুণফলের সমান হলে, শেষোক্ত রাশিগুলোর প্রথমোক্ত রাশির উৎপাদক বা গুণনীয়ক বলা হয় । 
উৎপাদক নির্ণয়ের কতিপয় কৌশলঃ 
ক) কোনো বহুপদীর প্রত্যেক পদে সাধারণ উৎপাদক থাকলে তা প্রথমে বের করে নিতে হয় । যেমনঃ 3a^2b+6ab^2+12a^2b^2=3ab(a+2b+4ab)
খ) একটি রাশিকে পূর্ণ বর্গ আকারে প্রকাশ করে । যেমন, 4x^2+12x+9 একটি রাশি 
একে বিশ্লেষণ করতে প্রথমে পূর্ণ বর্গ আকারে প্রকাশ করতে হবে । 
4x^2+12x+9=(2x)^2+2 imes2x imes3+(3)^2
                           =(2x+3)^2=(2x+3)(2x+3)
গ) একটি রাশিকে দুটি বর্গের অন্তররূপে প্রকাশ করে এবং a^2-b^2=(a+b)(a-b) সুত্র প্রয়োগ করে । 
ঘ) x^2+(a+b)x+ab=(x+a)(x+b) সূত্রটি ব্যবহার করে । 
এপদ্ধতিতে x^2+px+1 আকারের বহুপদীর উৎপাদক নির্ণয় করা সম্ভব হয় যদি দুইটি পূর্ণসংখ্যা a ও b নির্ণয় করা যায় যেন, a + b = p এবং ab=1 হয় । এজন্য q এর দুটি সচিহ্ন উৎপাদক নিতে হয় যাদের বীজগাণিতিক সমষ্টি p হয় । q>0 হলে, a ও b একই চিহ্নযুক্ত হবে এবং q<0 হলে, a ও b বিপরীত চিহ্নযুক্ত হবে । 
ঙ) ax^2+bx+cআকারের বহুপদীর মধ্যপদ বিভক্তিকরণ পদ্ধতি । 
ax^2+bx+c=(rx+p)(sx+q) হবে 
যদি ax^2+bx+c=rsx^2+x(rq+sp)+pq
অর্থাৎ a=rs,b=rq+sp এবং c=pq হয় । 
সুতরাং ac=rspq=(rq)(sq) এবং b=rq+sq
অথএব ax^2+bx+c আকারের বহুপদীর উৎপাদক নির্ণয় করতে হলে ac অর্থাৎ x^2 এর সহগ এবং x বর্জিত পদের গুনফল্কে এমন দুইটি উৎপাদকে প্রকাশ করতে হবে যাদের বীজগাণিতিক সমষ্টি x এর সহগ b এর সমান হয় । 
জ) ভগ্নাংশযুক্ত রাশির উৎপাদক 

ভাগশেষ উপপাদ্য (Remainder, , Theorem):

6x^2-7x+5 কে x-1 দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল হয় 6x-1 এবং ভাগশেষ হয় 4
আমরা জানি ভাজ্য = ভাজক  imes ভাগফল + ভাগশেষ 
এখন যদি আমরা ভাজ্যকে f(x), ভাগফলকে h(x), ভাগশেষকে r ও ভাজককে (x-a) দ্বারা সূচিত করি, তাহলে উপরের সুত্র থেকে পাই, 
f(x)=(x-a).h(x)+r এই সূত্রটি a এর সকল মানের জন্য সত্য ।
উভয়পক্ষে x=a বসিয়ে পাই , 
f(a)=(a-a).h(a)+r=0.h(a)+r=r
সুতরাং r=f(a)
অথএব, f(x) কে (x-a) দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ হয় f(a) . এই সুত্র ভাগশেষ উপপাদ্য নামে পরিচিত । অর্থাৎ ধনাত্মক মাত্রার কোনো বহুপদী f(x) কে (x-a) আকারের বহুপদী দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ কত হবে তা ভাগ না করে বের করার সুত্রই হল ভাগ শেষ উপপাদ্য । ভাজক বহুপদী x-a আকারের বহুপদী এর মাত্রা 1, ভাজক যদি ভাজ্যের উৎপাদক হয়, তাহলে ভাগশেষ হবে শুন্য । আর যদি উৎপাদক না হয়, তাহলে ভাগশেষ থাকবে এবং তা হবে অশূন্য কোনো সংখ্যা । 
প্রতিজ্ঞাঃ যদি f(x) এর মাত্রা ধনাত্মক হয় এবং a
e0 হয়, তবে f(x) কে (ax+b) দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ হয় fleft ( -frac{b}{a} 
ight )
অনুসিধান্তঃ (x-a),f(x) এর উৎপাদক হবে যদি এবং কেবল যদি f(a)=0 হয় ।

বাস্তব সমস্যা সমাধানে বীজগাণিতিক সুত্র গঠন ও প্রয়োগঃ

আগের অধ্যায়গুলোতে আমরা যে সুত্র অনুসিধান্ত স্বীকার্য নিয়ে আলোচনা করেছি তাঁর প্রয়োগ করে আমরা এই অধ্যায় এ বিভিন্ন রকম অঙ্ক করব ।
সমস্যা সমাধানের পদ্ধতিঃ
(ক) প্রথমেই সতর্কতার সাথে সমস্যাটি পর্যবেক্ষণ করে এবং মনেযোগ সহকারে পড়ে কোনগুলো অজ্ঞাত এবং কী নির্ণয় করতে হবে তা চিহ্নিত করতে হবে । 
খ) অজ্ঞাত রাশিগুলোর একটিকে যেকোনো চলক ( ধরি x ) দ্বারা সূচিত করতে হবে অতঃপর সমস্যাটি ভালভাবে অনুধাবন করে অন্যান্য অজ্ঞাত রাশিগুলোকে একই চলক x এর মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে । 
গ) সমস্যাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে বীজগাণিতিক রাশি দ্বারা প্রকাশ করতে হবে । 
ঘ) প্রদত্ত শর্ত ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলোকে একত্রে একটি সমীকরণে পরকাশ করতে হবে ।
ঙ) সমীকরণটি সমাধান করে অজ্ঞাত রাশি x এর মান নির্ণয় করতে হবে । 
বাস্তব সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সুত্র ব্যবহার করা হয় তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ 
১) দেয় বা প্রাপ্য বিষয়কঃ দেয় বা প্রাপ্য, A=qn টাকা 
    যেখানে, q = জনপ্রতি দেয় বা প্রাপ্য টাকার পরিমাণ 
           n = লোকের সংখ্যা 
২) সময় বা কাজ বিষয়কঃ
    কয়েকজন লোক একটি কাজ সম্পন্ন করলে কাজের পরিমাণ, W=qnx 
    যেখানে, q = প্রত্যেক একক সময়ে কাজের যে অংশ সম্পন্ন করে, 
               n = কাজ সম্পাদনকারীর সংখ্যা 
              x = কাজের মোট সময় 
             W = n জনে x সময়ে কাজের যে অংশ সম্পন্ন করে । 
৩) সময় ও দূরত্ব বিষয়কঃ
    নির্দিষ্ট সময়ে দূরত্ব, d = vt 
    যেখানে, v = প্রতি ঘণ্টায় গতিবেগ 
               t = মোট সময় 
৪) নল ও চৌবাচ্চা বিষয়কঃ
    নির্দিষ্ট সময়ে চউবাচ্চার পানির পরিমাণ Q(t)=Q_0pm qt
যেখানে Q_0= নলের মুখ খুলে দেওয়ার সময় চৌবাচ্চায় জমা পানির পরিমাণ 
          q = প্রতি একক সময়ে নল দিয়ে যে পানি প্রবেশ করে অথবা বের হয় ।
          t = অতিক্রান্ত সময় 
        Q(t)= t সময়ে চৌবাচ্চায় পানির পরিমাণ ( পানি প্রবেশ হওয়ার শর্তে "+" এবং পানি বের হওয়ার শর্তে " - " চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে ) ।
৫) শতকরা অংশ বিষয়কঃ
    p = br 
   যেখানে, b = মোট রাশি 
              r = শতকরা ভগ্নাংশ =frac{s}{100}=s%
             p = শতকরা অংশ = b এর s% 
৬) লাভ- ক্ষতি বিষয়কঃ 
    S=C(Ipm r)
লাভের ক্ষেত্রে S=C(I+r)
এবং ক্ষতির ক্ষেত্রে, S=C(I-r)
যেখানে, S(টাকা ) = বিক্রয়মূল্য
           C(টাকা) = ক্রয়মূল্য 
           I = লাভ বা মুনাফা
          r = লাভ বা ক্ষতির হার 
৭) বিনিয়োগ- মুনাফা বিষয়কঃ 
     সরল মুনাফার ক্ষেত্রে, 
     I = Pnr টাকা
    A = P+I=P+Pnr= P(1+nr) টাকা
  চক্রবৃদ্ধি মুনাফার ক্ষেত্রে, 
   A=P(1+r)^n
 যেখানে, I= n সময় পরে মুনাফা 
           n = নির্দিষ্ট সময়  
          P = মূলধন 
           r = একক সময়ে একক মূলধনের মুনাফা 
         A = n সময় পরে মুনাফাসহ মূলধন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...