বনলতা সেনের নাটোর। নারদ নদীর তীরে অবস্থিত রাজশাহী বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা এটি। ইতিহাস-সমৃদ্ধ নাটোরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ভ্রমণের উপযোগী অনেক জায়গা। দুয়েক দিনের সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন এসব জায়গার উদ্দেশে।
রাণী ভবানী রাজবাড়ি
নাটোর জেলা শহরের বঙ্গজ্জল এলাকায় রয়েছে রাণী ভবানী রাজপ্রাসাদ। তোরণ পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়বে রাজবাড়ির কামান। রাজবাড়িটির ভেতরে রয়েছে ৬টি দিঘি।
আর পুরো রাজবাড়িটি বাইরের দিক থেকে লেক আকৃতির দিঘি দিয়ে ঘেরা। ভেতরে রয়েছে বড় তরফ ভবন নামে পরিচিত রাণী ভবানীর রাজপ্রাসাদ। সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত সুরম্য এ ভবনটি আজও সবার দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। জানা যায়, রাজা রামজীবন ১৭০৬-১৭১০ সালের কোনো একসময় পুঠিয়ার রাজার নিকট থেকে প্রায় ১৮০ বিঘার একটি বিল দান হিসেবে গ্রহণ করে সেখানে এই রাজপ্রাসাদ গড়ে তোলেন। রাজা রামজীবনের একমাত্র ছেলে কলিকা প্রসাদ মারা গেলে তার দত্তক ছেলের সঙ্গে রাণী ভবানীর বিয়ে দেন।
Nator-Rajbari-rani
উত্তরা গণভবন
জেলা শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি, যা উত্তরা গণভবন নামে পরিচিত। নাটোরের রাণী ভবানী তার নায়েব দয়ারামের ওপরে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে দিঘাপাতিয়া পরগনা উপহার দেন। এখানে তিনি গড়ে তোলেন বেশ কটি সুরম্য প্রাসাদ। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে সেগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। পরে তার উত্তরসূরি প্রমোদনাথ রায় নতুন করে এখানে কয়েকটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত করার পর ১৯৫২ সালে দিঘাপাতিয়ার শেষ রাজা প্রতিভানাথ সপরিবারে ভারত চলে যান। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এ রাজপ্রাসাদটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর ১৯৬৬ সালে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের নজরে আসে এবং এর সংস্কার করা হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার এটিকে ব্যবহার করছে উত্তরা গণভবন হিসেবে। প্রায় ৪৩ একর জায়গা জুড়ে চারিদিকে লেক ও প্রাচীরবেষ্টিত এ রাজবাড়িটিতে ছোট বড় বারোটি সুরম্য ভবন আছে। ভেতরে আছে ইতালি থেকে সংগৃহীত ভাস্কর্য সজ্জিত বাগান। উত্তরা গণভবনের প্রবেশ পথে চারতলা বিশিষ্ট পিরামিড আকৃতির প্রবেশ দ্বার। আর এর চূড়ায় রয়েছে বিলেতের কোক অ্যান্ড টেলভী কোম্পানির শতবর্ষী প্রাচীন ঘণ্টা ঘড়ি।
চলনবিল
দেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিলের একটি অংশ পড়েছে নাটোরে। জেলার সিংড়া উপজেলায় রয়েছে চলনবিলের বড় একটি অংশ। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের হাটিকুমড়ুল থেকে বনপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক তৈরি হয়েছে চলনবিলের ওপর দিয়েই। শীতে এসব বিলের পানি শুকিয়ে গেলেও বর্ষায় থাকে পরিপূর্ণ। সড়কের দুপাশে এ সময়ে যেদিকে চোখ যায় শুধু অথৈ জলরাশি। নিজস্ব গাড়িতে গেলে যাত্রা পথেই চলনবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব।
cholon-beel
চলনবিল জাদুঘর
জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর গ্রামে আছে চলনবিল জাদুঘর। স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হামিদ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নিজ বাড়িতে ১৯৭৮ সালে গড়ে তুলেছেন বিচিত্র এ জাদুঘর। চলনবিলে প্রাপ্ত নানান নিদর্শন, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ছাড়াও এখানে আছে অনেক দুর্লভ সংগ্রহ। নাটোর থেকে বাসে গুরুদাসপুর উপজেলায় এসে সেখান থেকে নদী পার হয়ে রিকশায় আসা যাবে খুবজিপুর গ্রামের এ জাদুঘরে। শনিবার জাদুঘরটি বন্ধ থাকে।
cholon-beel-museum
হাইতি বিল
জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে নলডাঙ্গা উপজেলায় আছে হাইতি বিল। প্রায় ৪৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ বিলটি দেশের সবচেয়ে গভীর বিল। প্রায় বারো মিটার গভীর এ বিলে সারা বছরই পানি থাকে। তবে বর্ষায় পানির পরিমাণ বেড়ে যায় অনেক বেশি।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, ন্যাশনাল পরিবহন প্রভৃতি বাসে যাওয়া যায় নাটোর। এছাড়া রাজশাহীগামী যেকোনো বাসেই নাটোর আসা সম্ভব। ভাড়া ৩৫০-৫০০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেন একতা এক্সপ্রেস, লালমণি এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেসে নাটোর আসা যায়।
কোথায় থাকবেন
নাটোর শহরে থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। শহরের চকরামপুরে হোটেল ভিআইপি, মাদ্রাসা রোডে হোটেল উত্তরা,
মাদ্রাসা মোড়ে হোটেল মিল্লাত, কানাইখালীতে হোটেল আরপি, কানাইখালীতে হোটেল রুখসানা। এসব হোটেলে ১০০-৮০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।